চা বিক্রি করে শুধু সফলই হননি, হয়েছেন কোটিপতিও

ভা’রতের প্রথম সারির বিজনেস স্কুলে ভর্তির সুযোগ পেতে প্রতি বছর কয়েক হাজার ছাত্র-ছা’ত্রী ক্যাট পরীক্ষায় অংশ নেন। ভালো চাকরি আর মোটা বেতনের জন্য এ ল’ড়াই। এ পরীক্ষায় অংশ নেন ভা’রতের মধ্যপ্রদেশের প্রফুল বিল্লোরে।

টানা তিন বছর মোটা মোটা বইয়ে মুখ গুঁজে পড়েছিলেন। প্রা’ণপণ চেষ্টা করেছেন ক্যাট উত্তীর্ণ হওয়ার জন্য। প্রতিবারই ব্যর্থতা দরজায় কড়া নেড়েছে তার।ভাঙা হৃদয়ে শেষে রাস্তায় রাস্তায় চা বিক্রি করতে শুরু করলেন। হয়ে উঠলেন ভা’রতের জনপ্রিয় চা বিক্রেতা ‘এমবিএ চাওয়ালা’। সেরা বিজনেস স্কুলে সুযোগ পাননি ঠিকই, কিন্তু অন্যতম সেরা ব্যবসায়ী হয়ে উঠলেন। প্রফুলের চাওয়ালা হয়ে ওঠার নেপথ্যে রয়েছে ব্যর্থতা।

ব্যর্থতাই জীবনকে অন্যভাবে দেখতে শিখিয়েছিল। আজ বিশ্বের প্রথম সারির বিজনেস স্কুলে পড়ুয়াদের ভাষণ দিয়ে আসেন তিনি। প্রকৃত ব্যবসায়ী হয়ে ওঠার পাঠ নেন।অ’ত্যন্ত ভেঙে পড়েছিলেন। জীবনের মূল্য হারিয়ে ফেলেছিলেন। সিদ্ধান্ত নেন নিজেকে কিছু অবসর সময় দেয়ার জন্য। বাবার থেকে টাকা নিয়ে ভা’রতের বিভিন্ন শহরে ঘুরে বেড়াতে শুরু করলেন। কিন্তু কতদিনই বা এভাবে কা’টানো সম্ভব! এমবিএ করার ইচ্ছা ততদিনে মুছে ফেললেও বাড়িতে সেটা জানানোর সাহস ছিল না।

শেষে আহমেদাবাদে এসে তিনি নিজের কিছু শুরু করার মনস্থির করলেন। প্রথমে ম্যাকডোনাল্ডের আউটলেটে ইন্টারভিউ দিয়ে একটা কাজ শুরু করলেন। সারাদিন ধরে ঝাড়ু দিতেন আউটলেটে। কখনও কখনও ক্রেতাদের থেকে অর্ডারও নিতেন এবং খাবার পরিবেশন করতেন।এভাবেই চলছিল। উপার্জনও হচ্ছিল। কিন্তু মনের শান্তি ছিল না। জীবন নিয়ে আক্ষেপ কিছুতেই কাটছিল না। নিজের কিছু করার ইচ্ছা থেকেই চা বিক্রির কথা মা’থায় আসে তার। আহমেদাবাদের এক এমবিএ কলেজে ভর্তি হওয়ার কথা বলে বাবার কাছ থেকে ৮ হাজার টাকাও জুটিয়ে নেন। ওই টাকায় কেটলি, কাপ, ট্রে এবং চা তৈরির সমস্ত কাঁচামাল কিনে পরদিন থেকেই রাস্তায় চা বিক্রি করতে শুরু করেন।

প্রথম’দিন কোনও ক্রেতা পাননি। পরদিন ফের রাস্তায় দোকান দিলেন। এবার নিজে ক্রেতার কাছে চলে যেতে শুরু করলেন। গ্রাহকের কাছে গিয়ে অর্ডার নেয়া এবং তাদের হাতে চা পৌঁছে দিলেন। ইংরেজি বলা চাওয়ালাকে পছন্দ করতে শুরু করলেন মানুষ। প্রথম’দিন ৫ জন ক্রেতা, পরদিন ২০ জন, এর পরদিন ১০০ জন এভাবে ক্রমে বাড়তে থাকে বিক্রি। দুই সপ্তাহের মধ্যে তার ব্যবসা এতটাই ফুলে ফেঁপে ওঠে যে আশেপাশের চা বিক্রেতাদের ঈর্ষার কারণ হয়ে উঠলেন।

জো’র করে তার দোকান তুলে দেয়া হলো। পরের কয়েক সপ্তাহ আর দোকান দিতে পারেননি তিনি। সে সময় গ্রাহকেরাই তাকে খুঁজতে শুরু করলেন। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রামে তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করেন অনেকে। ফের চায়ের কেটলি নিয়ে আহমেদাবাদের অন্য জায়গায় দোকান দেন তিনি। এবার আহমেদাবাদের এক হাসপাতা’লের ভিতর দোকান দেন। প্রতি মাসে এক হাজার টাকা ভাড়াও দিতেন। প্রফুল শুধু চা বেচতেন না, গ্রাহকদের সঙ্গে সংযোগ স্থাপনের নিত্যনতুন ভাবনা নিয়ে হাজির হতেন। ছবি: সংগৃহীত

এর মাঝে ব্যবসা বাড়ানোর জন্য বাবাকে মিথ্যা বলে ফের ৫০ হাজার টাকা চেয়ে নিয়েছিলেন। বাবা জানতেন, ছে’লে আহমেদাবাদের এক এমবিএ কলেজে ভর্তি হয়েছেন। বাবা যাতে তার ব্যবসায় বাধা হয়ে না দাঁড়ান তাই আহমেদাবাদের এক কলেজে ভর্তি হয়েও নেন। কিন্তু কয়েকদিন ক্লাস করার পর আর কলেজে পা রাখেননি। নিজের দোকানের নামকরণ করলেন ‘এমবিএ চাওয়ালা’। এমবিএ-র পুরো অর্থ মিস্টার বিল্লোরে আম’দাবাদ। বিল্লোরে তার পদবী। আহমেদাবাদে চায়ের দোকান এবং পদবীর আগে ‘মিস্টার’ শব্দ জুড়েছিলেন। এবার প্রতিটি শব্দের প্রথম অক্ষর নিয়েই তৈরি হয়েছিল এমবিএ।

অনেকেই বুঝতে পারতেন না এর প্রকৃত অর্থ। চাওয়ালা তাও আবার এমবিএ! এমবিএ করে চা বিক্রি! এ সব নানা কথা নিয়ে হাসাহাসিও করতেন। তাতে ব্যবসায় কোনো প্রভাব পড়েনি যদিও। আহমেদাবাদে ৩০০ বর্গ ফুটের দোকান রয়েছে তার। তাতে এখন ২০ জন কর্মচারী কাজ করেন। সেরা বিজনেস স্কুলে ভর্তি না হয়েও প্রফুল আজ কোটিপতি। ২০১৯-২০২০ সালে ব্যবসার টার্নওভা’র ছিল ৩ কোটি টাকা। পড়ুয়াদের ভাষণ দিতে আইআইএম কিংবা হার্ভা’র্ড বিজনেস স্কুলে প্রায়ই ডাক পান তিনি। তার কাহিনি মনোবল বাড়ায় পড়ুয়াদের।

Related Articles

Back to top button