বিবাহিত বন্দির সঙ্গে কারাগারে স্ত্রীর/স্বামীর সময় কাটানোর সুযোগ থাকা উচিত

সম্প্রতি হলমা’র্ক কেলেঙ্কারির অন্যতম হোতা তুষারের ঘুষের বিনিময়ে কারাগারে নারীসঙ্গ নিয়ে দেশজুড়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে জ’ড়িতদের বি’রুদ্ধে ব্যবস্থাও নেওয়া শুরু হয়েছে। অ’নৈতিক লেনদেনের বিনিময়ে প্রচলিত আইন অমান্য করে কারাগারে নারীসঙ্গ নিয়ে যে সমালোচনা হচ্ছে তা যথার্থ।
তবে কারাগারে ব’ন্দিদের সঙ্গে স্ত্রী’/স্বামীর সময় কা’টানোর সুযোগ থাকা উচিত বলে মত দিয়েছেন প্রখ্যাত ইস’লামি স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহ। তিনি নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ বিষয়ে ইস’লামের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন।সেখানে তিনি লিখেছেন- একজন ব’ন্দির এ সংশ্লিষ্ট অধিকার বিষয়ে ইস’লামের দৃষ্টিভঙ্গি ও দুটি প্রস্তাবনা তুলে ধরতে চাই। ব’ন্দি অ’ভিযু’ক্ত কিংবা দোষী সাব্যস্ত যা-ই হোন না কেন, মৌলিক মানবিক অধিকার থেকে থেকে তাকে বঞ্চিত করা যাবে না। এ নিয়ে কারো দ্বিমত নাই।
বিবাহিত ব’ন্দির নৈতিক ও চারিত্রিক অধ:পতন রোধ এবং মানসিক বিকাশের প্রয়োজনে স্ত্রী’র সম্মতি সাপেক্ষে, সংশ্লিষ্ট জে’লকোড ও শর্তাবলী অনুসরণ করে নির্ধারিত বিরতিতে স্ত্রী’র সাথে একান্তে সময় কা’টানোর সুযোগ থাকা উচিত বলে মনে করেন বেশিরভাগ ইস’লামিক স্কলারগণ। এর অন্যতম একটি কারণ হলো, স্বামীর অ’প’রাধের কারণে স্ত্রী’কে জৈবিক প্রয়োজন মেটানোর অধিকার থেকে বঞ্চিত করা ন্যয়সঙ্গত হতে পারে না।
ইস’লামের দ্বিতীয় খলীফা, মানব ইতিহাসের অন্যতম ন্যয়বিচারক ও আদর্শ শাসক হযরত উম’র (রা:) ব’ন্দিদেরকে স্ত্রী’র সঙ্গে একান্তে সাক্ষাতের সুযোগ দিতেন। ইস’লামের ইতিহাসের বেশিরভাগ ই’মাম ও স্কলারগন যেমন ই’মাম আবু হানীফা, ই’মাম আহমাদ ইবনে হাম্বল ও ই’মাম শাফেয়ী (রাহিমাহু’মুল্লাহ) এর এক বর্ণনা অনুযায়ী ব’ন্দিকে নির্দিষ্ট শর্ত ও জে’লকোড এবং স্ত্রী’র সম্মতি সাপেক্ষে স্ত্রী’র সঙ্গে একান্তে সাক্ষাতের সুযোগ দেওয়া উচিত। ব’ন্দি যদি নারী হন তবে সেক্ষেত্রেও একই কথা প্রযোজ্য।
সৌদি আরবসহ পৃথিবীর বহু দেশে এ নিয়ম পুরোপুরি প্রচলিত আছে। কানাডা, অষ্ট্রেলিয়া, রাশিয়া, স্পেনসহ অনেক দেশে এ নিয়ম আছে। ভা’রতের পাঞ্জাব ও হরিয়ানার হাই’কোর্টের ২০১৫ সালের একটি রায়ের পর থেকে এ নিয়ম চালু আছে। তুরস্কে কোনো কয়েদির সুন্দর আচরণ, শৃংখলা ও সার্বিকভাবে ভালো পারফরমেন্স হলে তাদেরকে এ সুযোগ দেওয়া হয়। এতে ব’ন্দির মানসিক বিকাশ ও চিন্তাগত সুস্থতার পথ সুগম হয় এবং চারিত্রিক স্খলনের পথ রুদ্ধ হয়।
শিকাগোর নর্থ ওয়েস্টার্ন ইউনিভা’র্সিটির ক্রিমিনাল ল এন্ড ক্রিমিনলজি বিষয়ক জার্নালে ১৯৫৮ সালে রুথ শনলে ক্যাভেন এবং ইউজেন এস জেমান-এর যৌথ আর্টিক্যাল Marital Relationship of Prisoner of 28 Countries এ কয়েদিদের বৈবাহিক স’ম্পর্ক স্থাপন করার গুরুত্ব উপস্থাপন করে এ বিষয়ে উপরিউক্ত তথ্য দিয়েছেন।
কেউ বলতে পারেন, জে’লে এ সুবিধা থাকলে আর ব’ন্দিত্বের মানে কি থাকে? এর উত্তর হলো, ব’ন্দিত্ব একটি সাজা। একজন ব’ন্দির সাজাভোগের পাশাপাশি মৌলিক মানবিক প্রয়োজনগুলো পূরণের সুযোগ যেমন দোষনীয় নয় এটিও দোষের নয়। বিশেষ করে এর সঙ্গে যেহেতু অন্যের অধিকার সংশ্লিষ্ট। জে’লে সন্তানাদি ও পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ যেমন ন্যায্য এটিও তেমন ন্যায্য।
সেই সাথে ব’ন্দিদের মানসিক ও আদর্শিক পরিচর্যার প্রয়োজনে প্রতিটি জে’লে ধ’র্মীয় আলোচনা ও মোটিভেশনাল স্পীচের ব্যবস্থা থাকা উচিত। কারণ ব’ন্দি জীবনের অবসরে মানুষ সবচেয়ে বেশি চিন্তা-ভাবনা ও আত্মশুদ্ধির সুযোগ পায়। সৌদি আরবের প্রতিটি জে’লে ‘শুঊনুদ্দীনিয়্যাহ’ বা ধ’র্মীয় এ্যফেয়ার্স বিভাগ আছে। এ বিভাগ কয়েদিদেরকে প্রাত্যহিক, সাপ্তাহিক, মাসিক এবং বাৎসরিক আলোচনা ও ধ’র্মীয় বই পুস্তক বিতরণসহ নানা ধরণের আয়োজন করে থাকে।
আমি যখন সৌদি আরবে ইস’লামিক এ্যাফেয়ার্স মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্প্রিচার ও ট্রান্সলেটর হিসেবে কর্ম’রত ছিলাম তখন সেখানকার বিভিন্ন জে’লে বাংলাদেশি কয়েদিদেরকে সপ্তাহে নূন্যতম একবার ধ’র্মীয় আলোচনা ও কাউন্সেলিং করা আমা’র দায়িত্বের মধ্যে ছিল। এর বিস্ময়কর প্রভাব আমি নিজে প্রত্যক্ষ করেছি। ইংল্যান্ডসহ অনেক অমু’সলিম প্রধান দেশেও এ নিয়ম আছে। বাংলাদেশে এ নিয়ম যথাযথভাবে করা হলে ব’ন্দিদের মানসিক বিকাশ ও সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার পথ সুগম হবে এবং দেশে অ’প’রাধ প্রবণতা কমে আসবে ইনশাল্লাহ।